মঙ্গলবার । ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ । ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২

তারেক রহমানের আস্থার বার্তা এবং পরীক্ষিত মুখ মঞ্জুর প্রত্যাবর্তন

নিয়াজ মাহমুদ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খুলনা বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক নাড়ি বুঝতে হলে খুলনার মানুষ ও মাটির রাজনীতিকে বুঝতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির রাজনীতিতে এক নতুন আলোড়ন তুলেছেন খুলনা মহানগর বিএনপির পরীক্ষিত নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশ ও আস্থার বার্তা যেন খুলনার রাজনীতিতে এক নতুন জাগরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান নতুন মেসেজ দিয়েছিলেন—’পেশি নয় জনসমর্থনই চূড়ান্ত মাপকাঠি’। এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ওই সময় কলাম লিখেছিলাম। খুলনা-২ আসনে পরীক্ষিত নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মনোনয়ন কনফার্ম করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার দলীয় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু শুধু একজন নেতা নন, তিনি খুলনা বিএনপির একটি প্রতীক। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি দলের দুঃসময়-সুখসময়ে পাশে থেকেছেন, মাঠে ছিলেন, কর্মীদের পাশে ছিলেন। তার নাম শুনলেই খুলনার রাজনীতিতে বিএনপির সংগঠন, ঐক্য ও নিষ্ঠার কথা উঠে আসে।

২০০১ সালের ১ অক্টোবরের জাতীয় নির্বাচনে খুলনা-২ (খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা) আসনটি থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে আলী আসগর লবি উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই ঐতিহ্যবাহী আসনটি তখন থেকেই খুলনা বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আর সেই ঘাঁটির মাটিতেই আজ আবার ফিরছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু – নবউদ্যমে, নবচেতনায়। এর আগে ২০০৯ সালে দলীয় প্রার্থী হিসাবে খুলনা-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

দলের উচ্চ পর্যায় থেকে যে ফোন এসেছিল, সেটি কেবল রাজনৈতিক অনুমোদন নয়, ছিল একটি আস্থার প্রতীক। বিএনপির তৃণমূলের প্রতি তারেক রহমানের বার্তা ছিল স্পষ্ট – “যিনি মাঠে কাজ করছেন, যিনি মানুষের পাশে আছেন, তাকেই সামনে আনতে হবে।” এই বার্তার বাস্তব প্রতিফলন খুলনায় দেখা যাচ্ছে মঞ্জুর মনোনয়ন ও প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে।

দলের অনেক অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তার পর এখন খুলনা বিএনপির নেতাকর্মীরা নতুন করে আশার আলো দেখছেন। তরুণ নেতারা মঞ্জুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন, প্রবীণরাও ফিরে পাচ্ছেন সংগঠনের স্পন্দন।

মঞ্জু কখনো কেবল বক্তৃতার রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তিনি মাঠের রাজনীতি করেন। খুলনার পাড়ায়-মহল্লায়, ব্যবসায়ী-শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক আজও অটুট। তিনি বিশ্বাস করেন, “দলের শক্তি মানে কর্মীর বিশ্বাস, নেতার নয়।” এই দৃষ্টিভঙ্গিই খুলনায় বিএনপির রাজনীতিকে নতুন আকার দিচ্ছে।

খুলনা মহানগর বিএনপির সংগঠন আজ পুনর্গঠনের পথে। বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটে কর্মীসমাবেশ, আলোচনাসভা এবং সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ – সবকিছুতেই প্রাণ ফিরেছে। শহরের রাজনৈতিক হাওয়া বলছে, “মঞ্জু ফিরেছেন, মাঠে প্রাণ এসেছে।”

খুলনা সবসময়ই ছিল বিএনপির কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে দলের প্রভাব বিস্তারে এই শহরই হলো কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপির জন্য খুলনা তাই শুধুমাত্র একটি আসন নয়- এটি একটি মনোবল।

মঞ্জুর নেতৃত্বে যদি সংগঠনের ভেতরকার বিভাজনগুলো ঘুচে যায়, যদি তরুণ-প্রবীণ একসঙ্গে কাজ করতে পারেন, তাহলে খুলনা আবারও হতে পারে বিএনপির পুনর্জাগরণের সূতিকাগার।

তারেক রহমানের ফোনটি খুলনা বিএনপির কাছে একটি ‘সিগনাল’ নয়, বরং একটি প্রেরণার শিখা। সেই শিখা এখন একে একে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিটি ওয়ার্ডে, প্রতিটি কর্মীর হৃদয়ে। নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ফেরা তাই কেবল একজন নেতার প্রত্যাবর্তন নয়-এটি খুলনা বিএনপির আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার সূচনা।

যদি এই ধারা বজায় থাকে, তবে আগামী দিনে খুলনা শুধু রাজনীতির মানচিত্রে নয়, দলীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবেও আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

খুলনা বিএনপির ইতিহাসে এই সময়টি এক নবজাগরণের অধ্যায়। তারেক রহমানের আস্থার বার্তা এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্ব—দুটো মিলেই যেন নতুন দিনের প্রতিশ্রুতি। খুলনার মানুষ রাজনীতিতে স্বপ্ন দেখতে জানেন; এবার তারা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রস্তুত। আর সেই পথের দিশা দেখাচ্ছেন—নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা বিএনপির পরীক্ষিত ও প্রেরণাদায়ক নেতা।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
email: niazjournalist@gmail.com

 

খূলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন